একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে লিস্ট ডেভলপ কান্ট্রি থেকে ডেভলপিং কান্ট্রি তে রেজিস্ট্রেশন রেকমেন্ডেশন দিয়েছে। তবে অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও দুর্নীতির প্রবণতা বেশি। ফলে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নেওয়া অনেক ইনিসিয়েটিভ এর সুফল সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছায় না। দেশের জনগণের জন্য নয় এসব ইনিশিয়েটিভের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অনেক অভাব দেখা যেত বিশেষ করে জনগণের জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন ভাতা এবং সাহায্য-সহযোগিতায় অনেক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলোর একটি আর্টিকেল সূত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২ তম।
এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরের কথা দেশের গণমাধ্যমগুলো উঠে আসে। কিন্তু গত কয়েক বছরে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস প্রোভাইডারদের মাধ্যমে সরকারি এসব ভাতা এবং অনুদান ডিস্ট্রিবিউশনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতির অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
গত দশকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এনার্জি ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন লক্ষ্য করা গেছে। এতসব সাফল্যের মধ্যে অন্যতম সাফল্য হচ্ছে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা। ২০১১ সালের মার্চে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে দেশে প্রথম মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এর সূচনা হয়। সে বছরের জুলাইতে ইউএসএ ব্যতিক্রম মানি ইন্দোনেশীয় ব্র্যাক ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিকাশ কার্যক্রম শুরু করে। এর কয়েক বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং তার আলোকে সেসময় আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তাদের কাস্টমার দের জন্য এই সার্ভিস নিয়ে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যসূত্র ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা লঞ্চ করলে ও ১৭ টি ব্যাংকে অ্যাক্টিভলি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছিল এবং তখন দেশের চার কোটিরও বেশি গ্রাহকের একাউন্ট ছিল। পরে মোবাইল ব্যাংকিং এর লাইসেন্স সংখ্যা একটি পর্যায়ে ২৯ টি তে গিয়ে পৌঁছায় অন্যদিকে দিকে বাংলাদেশ অন্যদিকে বাংলাদেশ অন্য একটি ব্যাংক এর সূত্র তথ্যসূত্রে জানাজায় ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশের ১৫ টি ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে এবং রেজিস্টার্ড গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবের বাইরে থাকার ডাক বিভাগের নগদ এর রেজিস্টার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি এবং দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।অন্যদিকে দেশের বাকি এমএফএস প্রকারের গুলো প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন কর।
গত দশকের শুরুর দিকে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী অনলাইন থেকে গেলেও বিকাশ নগদ ও রকেট সেবার মাধ্যমে বর্তমানে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে অর্থ লেনদেন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক পরিবর্তন এসেছে তবে যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা গেছে সরকারি ভাতা ও অনুদান ডিস্ট্রিবিউশনে।
দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে বিভিন্ন সময়ে বন্যা, খর, নদী ভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে। এসময় দুর্যোগের পড়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যে এবং পুনর্বাসন এদেশের সরকার সবসময়ই এগিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে সরকার এসব দোস্ত জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করেছে এছাড়াও চলমান করোনা মহামারীতে ২০১৯ সালের নিম্নআয়ের জনগণ এবং কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ সহ বেশ কয়েকবার প্রণোদনা ও দিয়েছে।
যদিও পূর্বে সরকারের সহযোগিতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে গিয়ে পৌছাতো না অনুদানের অর্থ সরকারি তহবিল থেকে স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমেই জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর কথা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক ক্ষেত্রেই তার সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে না।
কেননা আমলাতান্ত্রিক ঈপ্রসেস অনেকগুলো পর্যায়ে পার হতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা এবং অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে খুব অল্পসংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে এই প্রাণ পৌছাতো না।এসব নিয়ে পেপার-পত্রিকায় অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের সরকারি কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায়ই খবর ছাপা হতো।কেননা পূর্বে যত অনুদান ও সরকারি সহযোগিতা প্রজেক্ট হয়েছে তাদের সহযোগিতার অর্থ দুস্থদের মাঝে সঠিকভাবে পৌঁছেছে কিনা তা অনিশ্চিত না।তবে গত দুই বছরে এই বিষয়টিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপহার পাঠান কথা জানান।প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রতিটি পরিবারকে২৫ টাকা করে পাঠানোর কথা ছিল যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় পরিবারের লিস্ট করা হয়। এসব পরিবারগুলোর মধ্যে ডাক বিভাগের এমএসএস নগদ ১৭ লাখ ,বিকাশ ১৫ লাখ এবং চলতি বছরের শুরুতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শিওর ক্যাশ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিল।যদিও সে বছরে ৩৪ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পাঠিয়েছিল।
একই পদ্ধতিতে এবছরের ঈদুল ফিতরের প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আবারো ৩৪ লাখ পরিবারকে ঈদ উপহার পাঠানো হয়েছিল। একই ভাবে ঈদুল আযহাতে ও কবিদের কারণে কাজ হারানো কৃষক-শ্রমিক সহ নানা পেশার আরো ১৭ লাখ মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে।যার পুরোটাই গেছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে যেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন নগদ।
এছাড়া প্রাথমিকের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণ করে নগদ। এর পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর আওতায় বেসরকারি এমএমএস প্রোভাইডার বিকাশ দুই লাখ এবং সরকারি ডাক বিভাগের নগদ শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণ করেছে।