ছাত্রজীবনে ছুটির দিন

ছাত্রজীবনে ছুটির দিন! সত্যি বলতে চাও জীবনে কতবার স্কুল থেকে পালিয়েছে হিসাব করা যাবে না। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই পালানো গুলো ছিল বন্ধুদের সাথে কাটানো অনেক ভালো অনেক সুন্দর অনেক মহিমাময় একটু সময়। এই সময়টাতে এত ভালো সময় কেটেছে যেটা বলে বুঝানো অনেকটা কষ্টকর হয়ে যাবে। প্রাইমারি স্কুল জীবনে এত বেশি পলাতক না হলেও হাই স্কুল জীবনে অনেকবার পালিয়ে যাওয়া ঘটনাটি ঘটেছে।

বিশেষ করে আমার যে ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল ওদের তো তুলনাই হয়না। ওরা যেন একসাথে সময় কাটাতে না পারলে সময়ই কাটে না। দেখা যায় বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে আসার পরেও স্কুলে প্রবেশ না করে আমাদের পুরো দলটি স্কুলের পিছনের বাগানে দৌড়াদৌড়ি মাতামাতিতে জড়িত ছিল। সময়টা ছিল একটা ভালোলাগার সময় যেটা জীবনে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এখন ইচ্ছে হয় আবার ওই দিনটাতে ফিরে যাওয়ার জন্য।

স্কুল জীবনে একটা শুক্রবার মানে ঈদের দিন। স্কুল জীবনে একটা লম্বা ছুটি মানে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ নেই। স্কুল জীবনে স্কুল থেকে পালিয়ে যাওয়া মানে মনের মধ্যে ভয় কাজ করে কালকে না জানি স্যার আমাকে কি বলে। মাঝের মধ্যে স্যার বেঞ্চের নিচে ঢুকিয়ে ডাস্টার দিয়ে পিঠাতো। ডাস্টার দিয়ে পিটানো খাওয়ার অনেক এক্সপেরিয়েন্স রয়েছে জীবনে বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলে। সত্যি বলতে শিক্ষকদের এই মাইর গুলো এখন আমাকে অনেক বেশি কাঁদায় ইচ্ছে হয় তাদের সেই মাইর গুলোতে আবার ফিরে যাই।

কত ভালো ছিল তাদের সেই মাইর তাদের আদর স্নেহ তাদের বকাঝকা। সোজা কথা আজকে আমরা তাদের জন্যই ভালোর পথে আলোর পথে রয়েছে। তারা যদি প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের না দিতো তাহলে আমরা আজকে এমন একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম না হয়তোবা আজকে আমরা আমাদের দেশের জাতীয় সব জিনিসের নাম গুলোও জানতাম না। জানতাম না আমাদের দেশের মন্ত্রী মিনিস্টার চেয়ারম্যান মেম্বার কারা জানতাম না আমার নিজের নাম লিখতে। বিশেষ করে ৫ ই অক্টোবর শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের প্রতি আমার অনেক অনেক ভালোবাসা।

আমি মাঝে মাঝে আমার এই স্কুলের শিক্ষকের বাড়িতে যাই, আবার কিছু কিছু সময় দেখা যায় এ সময় পেলে সেই প্রাইমারি স্কুলে চলে যাই সেখানে আমার টিচার রয়েছেন। তাদের সাথে দেখা করতে গেলে এখন অন্যরকম একটা সম্মানজনক প্রত্যেকদিন পেতে ইচ্ছে করে আমার কিন্তু মিষ্টি প্রত্যেকদিন খেলে সেটা ভিন্ন হয়ে যায় সে চিন্তায় প্রত্যেকদিন খাওয়া হয়না। এরপর এভাবে প্রত্যেক মাসে একবার হলেও তাদের সাথে দেখা করতে যাই। আমি মনে করি মায়ের ভালোবাসার পরেই শিক্ষকদের ভালোবাসা।

শিক্ষকদের ভালোবাসা যেন এক মহান স্নেহ মায়া-মমতা থাকে এটি তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন বিদায় অনুষ্ঠান হয় কিছু কিছু শিক্ষার্থী বিদায় অনুষ্ঠানে কেঁদে ফেলে আবেগ আবেগ ধরে রাখতে পারেনা। যখন চিন্তা করে এখান থেকে আমাকে বিদায় দিতে হবে আমি আর এই স্কুলের বেঞ্চের কোন অধিকারী নয় তখনই অন্তর থেকে কান্না চলে আসে এটি কেউ চাইলেই কাঁদতে পারেনা একটি অন্তর থেকেই চলে আসে যখন চিন্তা করে আমার এই প্রাথমিক বন্ধুর সাথে হয়তবা আর এত ভালোভাবে দেখা নাও হতে পারে তখনই অন্তর থেকে কান্না চলে আসে।

আমার দেখা অনেক বিদায় অনুষ্ঠান রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরা কেঁদে ফেলেন। অনেক শিক্ষার্থী আছে মেধা ভাল আদব আচার-আচরণ সব ভালো তাদেরকে শিক্ষকরা মোটেই ছাড়তে চায় না। তাদেরকে যদি শিক্ষকরা সারা জীবন কাছে পেতে পারতো তাহলে সেটা অবশ্যই করত। আমার কয়েকজন শিক্ষক ছিল বেস্ট টিচার। তাদেরকে ভোলার মত অনুভুতি আমার কখনো হবে না। তারা আমাকে এত পরিমান ভালোবাসতেন বিশেষ করে আমি কোন সমস্যায় পড়লে সেখান থেকে আমাকে ছাড়া উদ্ধার করেছেন এটা আমার মনে আছে।

আমি একটু চালাক টাইপের হলেও শিক্ষার্থীদের কাছে আমি তাদের বন্ধু আর বিশেষ করে শিক্ষকদের কাছে তাদের ছেলের মত। শিক্ষক জীবনে এমন একটা অনুপ্রেরণা যা কল্পনা করেও বলা যায় না যেটা উপলব্ধি করা যায় শিক্ষককে ছেড়ে যাওয়ার পরে। অনেক সময় ইচ্ছে হয় সেই পুরোনো দিনে ফিরে যাই কিন্তু এটা করা সম্ভব নয় যদি এটা সম্ভবত এটাই করতাম। জীবনটা কত সুন্দর করে সাজাতে চেয়েও দেখি জীবনে অনেক হিসাব বাকি। এই সবগুলোর মিলছে না পাচ্ছি না কোনোভাবেই আমি।

হিসেবগুলো যেন মরণ পর্যন্ত বাকি থেকে যাবে। হিসাবগুলো পরিপূর্ণতা কখনোই আমি পাচ্ছি না। হে মহান সৃষ্টিকর্তা আমার সকল শিক্ষকগণ কে আপনি সর্বদা সুস্থ রাখুন তাহলে কি আপনি দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমার শিক্ষকদের মত থেকে যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন তাদেরকে আপনি জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন।

Leave a Comment